“ঝাউবনের শাখায় দোলে সাগরের আহ্বান”…

“ঝাউবনের শাখায় দোলে সাগরের আহ্বান”-মাহমুদুর রহমান।

ঝাউবনের শাখায় দুলে সাগরের আহ্বান-কথাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা অনুধাবন করতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তা আবিষ্কার করার। কিন্তু, কিভাবে সম্ভব?
কলেজ লাইফে জানতাম, নিজেকে বুঝতে হলে হারিয়ে যেতে হয় প্রকৃতির মাঝে, খুব কাছাকাছি একাকার হয়ে। যেখানে প্রকৃতি তার উদার চিত্তে আমাকে বরণ করে নেবে, সুরালা বাতাস তার গভীর আলিঙ্গনে আমাকে শিহরণ দেবে, মুগ্ধ করে দিবে পাখির কলতান। তবে তাই হবে-
আর তাই নিস্তব্ধতা কাটিয়ে নিজেকে নিয়ে গেলাম সাগরের কাছে। যদিও কর্মব্যস্ততা আমাকে হাতছানি দিচ্ছে। যা শুধু নিজের জন্য অন্যকে উপভোগ করা। সৃষ্টি নেশায় আজ আমি উন্মাদ। আনন্দ-বেদনা, মায়া-মমতা, ইন্দ্রজাল আমাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আজ প্রাপ্তিতে অপেক্ষমান। সবকিছু পিছু হটিয়ে গভীর মিতালীতে নিজেকে জড়ালাম সৈকতের মাঝে। পক্ষ-বিপক্ষ, নিরপেক্ষতার খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটেছি দিগ-বিদিক। যেখানে অন্ধকার রজনী আমাকে বারংবার রুখে দিয়েছে। ঠিক তখনও একটি নাম অনুভবে আমাকে হাতছানি দিচ্ছে, আশায় বুক বেঁধে আশ্বস্ত হলাম।
তাই অবস্থানগত বৈষম্যতা কমাতে নব্য প্রযুক্তির ক্ষুদ্র আবিষ্কার কে করলাম প্রোপার ইউটিলাইজ। ব্যস্ততার বলয় কাটিয়ে অকপটে ডাকতে থাকলাম-বুড়ি! বুড়ি!! বুড়ি!!!
কোথায় তুমি?
ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
কেমন আছো তুমি?
প্রশ্নের জবাব যে প্রশ্ন দিয়েই হয় তা জানতাম না। সে বলল, রাত কটা বাজে? এখন ঘুমানো কি স্বাভাবিক না?
হ্যাঁ, সবই স্বাভাবিক। তাহলে, আমি কেন আজ এতটা অস্বাভাবিক?
আচ্ছা, তুমি কি কিছু খেয়েছো? হ্যাঁ, একটু খেয়েছি, আর খাব না কখনো। তোমাকে কিছু বলার ছিল। ওকে ফাইন বল- রাত প্রায় ১২:৪৫, এই নিস্তব্ধতার মাঝে তুমি কি কিছু শুনতে পারছ না?
হ্যাঁ, পারছি, সাগরের গর্জন শুনতে পারছি। বলতে পারো, কিসের জন্য এই গর্জন?
কিসের জন্য আবার, পানির গর্জন।
না, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে বল।
পারছি না, তুমি বলে দাও।
তাহলে মনের জানালা খুলো আর নিস্তব্ধতার মাঝে মনোযোগ দিয়ে শোনো।
এটা হল, এই মুহূর্তে সাগরের নিঃসঙ্গতার গর্জন। হ্যাঁ, নিঃসঙ্গ সৈকতের হাহাকার আমাকে বরণ করতে তার পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ধুত, কিছুই বুঝতে পারছি না, সাগরের আবার নিঃসঙ্গতা কিসের?
সাগর পরিপূর্ণ তখনই, যখন তার পরিবেষ্টিত পরিবেশ বর্তমান। কিন্তু, সবচেয়ে বেশি পুলকিত হয় যখন মনুষ্য-গোষ্ঠি তার কুলে আছড়ে পড়ে। অথচ শূন্যতার বেড়াজারে আজ তাকে ঘিরে ধরেছে।পশ্চিম আকাশের ধ্রুবতারাও আজ তার অবস্থান নেড়েছে। স্বার্থপর মানুষ কতইনা আপন ব্যস্ততায় ব্যস্ত, বাস্তবতা ভুলে স্বপ্ন দেখার মহা আয়োজন।
হয়তোবা, সাগরের সাথে আমার কোথাও নিবিড় মিল রয়েছে, তা না হলে সাগরের হাহাকার আমাকে এতটা টানবে কেন?
একটি প্রশ্ন কামনা করেই মূলত এতক্ষণ অপেক্ষা করা। আমি আশা করেছিলাম তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করবে, আমার শূন্যতা কিসে? সাগরের একাকীত্ব কেন আমাকে এতটা নাড়া দিবে?
সত্যিই তো, আমার শূন্যতা কিসের? যেখানে মাতৃছায়া আর পিতৃ ধারক আমাতে প্রতি মুহূর্তে পরিপূর্ণ, সেখানে একাকীত্ব কেন? তোমাকে এত বেশি মিস করছি কেন? তোমাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে কেন? অনুভবে, আমি তোমাকে এত বেশি ভাবছি কেন? তবে কি, ধরে নিতে পারি আমার এই নিঃসঙ্গতার কারণ কেবল তুমি?
তুমি বলো, তোমার কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছে।
তার মানে, তোমার শুনতে ভালোলাগার জন্যই কি আমার কথাগুলো বলা?
কিন্তু, আমি তো খরা মাঠে উচ্ছল কান্নাঝড়া বৃষ্টির স্বাদ দিতে চেয়েছি।
না, আসলে তুমি সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারো।
তাই?
হ্যাঁ।
আমি এখন রাখবো, কেন? আমি শুনতে চেয়েছি তাই বলে? না, বলতে পারছি না তাই বলে। প্লিজ, রেখোনা।
আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি ১০ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি।
আশ্চর্য, ১০ মিনিট পরে কেন?
না, মানে______এরই মাঝে আমি সাগরের বুকে হাঁটু জল নেমে যাব আর মুখ ধোবো। দেখি, সাগর আমাকে কতটা বলতে সাহস যোগায়?

ধন্যবাদ।

1 thought on ““ঝাউবনের শাখায় দোলে সাগরের আহ্বান”…”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top